আসছে বিশ্বকাপে কোনও দেশের পতাকা উরানো যাবে না এই মর্মে এক উকিল সাহেব রিট করেছেন রায়ও পেয়েছেন

আসছে বিশ্বকাপে কোনও দেশের পতাকা উরানো যাবে না এই মর্মে এক উকিল সাহেব রিট করেছেন
রায়ও পেয়েছেন
আমাদের গ্রামে এক মামলা চাচা আছে... উনার কাজই হলো মামলা করা
সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়ত ভালো লাগছে না, ‘যাই একটা মামলা করে আসি’ বলে সাফারি পরে রওনা দেন কোর্টে
এরকম চাচা দেখি ঢাকা শহরেও আছে
আমাদের দেশে এই ফুটবল ক্রেজকে ভাই কোনও রায়-মায় দিয়ে থামিয়ে রাখা যাবে না
একটু হিসাব করে দেখেন, আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা ৪ কোটি... আর আমাদের ১৬ কোটির দেশে প্রায় অর্ধেকই (৮ কোটি) হলো আর্জেন্টিনার সাপোর্টার
আসছে মৌসুমে; সুন্দরবনের কিছু অংশ আর বান্দরবানের বিদ্রোহীঅধ্যুষিত কিছু এলাকা বাদে, বাংলাদেশের যে প্রান্তে নিয়ে আপনাকে ফেলা হোক না কেন, আপনি আশেপাশে তাকালে, খালি চোখে আপনার ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা বা জার্মানির কোনও একটা দেশের পতাকা চোখে পড়বেই পড়বে
... এর নাম বাংলাদেশ
এই দেশে থেকে আপনি এরকম মামলা করতে পারলেন? জাজ সাহেব আবার রায়ও দিতে পারল?
আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশ আজ বিশ্বকাপে খেলতে পারলে, আশেপাশে আজ একটাও ব্রাজিল আর্জেন্টিনার পতাকা থাকতো??? ... লাল সবুজে ছেয়ে যেতোনা দেশ
মনে আছে... ছোটবেলায় ইন্দিরা রোডে আমাদের সাথে মোহাম্মদ আলী নামে একজন ফুটবল খেলত। পিচ্চি ছেলে... হয়ত ক্লাস ৯/১০ এ পড়ত ... তার খেলা দেখলে আশেপাশের মানুষের মুখ হা হয়ে যেত
এতো সুন্দরভাবে সে সারা মাঠে বল কাটাতো, দেখার মত
আশেপাশের মাঠ থেকে তাকে হায়ার করে নিয়ে যেত
এই ছেলে যদি সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেতো, আমি শিওর সে আজকে ইংল্যান্ডের কোনও ক্লাবে খেলতো
সে এখন কি করে জানেন?? ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে জব করে
ফাইল বগলে নিয়ে মানুষরে কাটাতে কাটাতে ফার্মগেট থেকে বাসে উঠে ... মতিঝিলে নেমে, আবার কাটায়ে কাটায়ে অফিসে দৌড়ায়
এরা হারিয়ে গেছে, আপনাদের মতো কিছু আমলা চাচাদের হামলা আর মামলার কারণে
আমি ছোটবেলায়, বিজয় স্মরনীর যেখানে এখন নভোথিয়েটার, সামরিক জাদুঘর... (সেই মাঠটার নাম একসময় ছিল “লাল দীঘির মাঠ”) ...সেই বিশাল মাঠে ফুটবল খেলে বড় হয়েছি আমি
এখনও মনে আছে... কোথা থেকে জানি ‘নবি কাকা’ নামের একজন প্রতিদিন বিকালে এসে পড়তো মাঠে ... তিনি ছিলেন স্বঘোষিত রেফারি
বাসায় বসে, শক্ত ক্যালেন্ডার পেপার কেটে বানানো লাল কার্ড আর হলুদ কার্ড থাকতো তার পকেটে ... “তিনি একবার সবুজ কার্ডের প্রচলনও শুরু করেছিলেন খেলায়”
খেলার মাঝখানে হাঁপাতে হাঁপাতে সবুজ কার্ড খাওয়া মানে, ‘তুমি ভালো খেলছো... তোমার ভবিষ্যৎ ভালো’
সবুজ কার্ড খেয়ে... ঘামতে ঘামতে হাফপ্যান্টের নিয়ার বাঁধতে বাঁধতে, দিতাম আবার দৌড় ...
সেই লাল দীঘির মাঠ নেই আজ ২১ বছর হলো... কার কাছে যেন সেদিন শুনলাম, নবি কাকা এখন ময়মনসিংহে কালো-হলুদ রঙের বেবি টেক্সি চালায়
আমলা চাচা, আপনারাই এই নবিকাকাদের হারানোর কারণ
মনে আছে, সেই সময় নবি কাকা আমাদের গল্প বলতেন, একবার তিনি স্টেডিয়ামে মোহামেডানের জার্সি পরে ভুলে আবাহনীর গ্যালারিতে যেয়ে বসে পড়েছিলেন
... এবং তারপর জার্সি খুলে, লোমশ খালি গায়ে বসে তার পুরো খেলাটা দেখতে হয়েছিল; তার যুক্তি ছিলো, “লজ্জা বড় না মাইর বড়?”
সেই সময়ে হাসতে হাসতে আমরাও স্বপ্ন দেখতাম একদিন, আমাদের জাতীয় টিমের সকাল বিকাল ভাত খাওয়া রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের লাথি খেয়ে, স্পেন ইটালির মাখন খাওয়া সুন্দর প্লেয়াররা পড়িমড়ি করে পালাবে
স্বপ্ন দেখতাম কায়সার হামিদ নড়তে নড়তে দৌড়াতে দৌড়াতে আস্তে আস্তে স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে গোলপোস্টের জাল ফেড়েঁ বিশ্বকাপের মাঠে গিয়ে দাঁড়াবে
আরও কিছু প্লেয়ারের নাম মনে পড়ছে; সাব্বির, জনি, জুয়েল রানা, মাসুদ রানা, রুপু, মোনেম মুন্না, আসলাম... কিন্তু কে কোন ভাগে (রক্ষণভাগে নাকি আক্রমণভাগে নাকি মিডফিল্ডে) খেলতো, তা ঠিক মনে পড়ছে না
মনে পড়বেই বা কেমনে; বল যেদিকে থাকতো, এলাকা ছেড়ে ১১ জন তো সেদিকেই থাকতো
...এর নামই যে ফুটবল প্রেম
নদীমাতৃক দেশ হওয়ার আগে থেকে এই দেশ ফুটবলমাতৃক দেশ ছিল
আজকেই বল নিয়ে আপনার গলিতে নেমে আপনি লুঙ্গি পরা কারো দিকে বলটা এগিয়ে দিলেও দেখবেন সে সেটা নিয়ে ড্রিব্লিং করে দেখাবে
সেই দেশে এমন পতাকা উরানো যাবে না রায় মানায় না
‘অস্ত্র জমা দিসি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেই নাই’ এর মতো পতাকাটা হয়ত সরালেন
কিন্তু প্রেমটা?
ও চাচা?

No comments

Powered by Blogger.